রুদ্র :- হ্যালো শোভনা দেবী ? শুনুন,আপনাকে আমার একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার আছে।
শোভনা হেসে বলল :- হ্যাঁ, আমি শোভনা। কিন্তু কি ব্যাপার বলুন তো? আচ্ছা ঠিক আছে যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন ।কারণ কাল আমাদের বিয়ে । একটা পরামর্শ দিচ্ছি! আজকে যা কিছু ভালো খাওয়ার খেয়ে নিন! কাল কিন্তু আপনাকে উপোস করে থাকতে হবে!
রুদ্র :- শুনুন! এই মুহূর্তে আমি আপনাকে একটা গরুত্বপূর্ণ কথা বলব। মন দিয়ে শুনুন কাল বিয়েটা আমি করতে পারছিনা। কারণ আমি অন্য একটা মেয়েকে ভালবাসি।
শোভনা:- শুনুন! এখন মজা করার সময় নয়, তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ুন। কাল দেখা হচ্ছে।
রুদ্র :- না না , আমি মজা করছি না। আমার অতসব ন্যাকামো লাগে না। আমি আপনাকে যেটা সত্যি, যেটা বাস্তব , সেটাই বললাম। আপনি এই কথাটা বাড়ির সকলকে জানিয়ে দিন। গুডনাইট।….
…ফোনটা কেটে যায়। শোভনা ভগ্নহৃদয়ে বিছানার উপর ধপ্ করে বসে পড়ে। পূর্ণিমার চাঁদের আলো তার করুণ মুখের উপর এসে পড়ে।যেন তাকে সান্ত্বনা দেয়…
।২।
বর্তমানে শোভনা ডঃ সৌরাশিসকে বিয়ে করে সুখেই আছে। সে নিজে এখন কলকাতার একটি বিদেশী কোম্পানির তথ্য প্রযুক্তি সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মচারী।আর রুদ্র একটা হাইস্কুলের ইংলিশের আ্যসিসট্যান্ট টিচার।সেও প্রাক্তন প্রেমিকা সৌরশ্মিকে বিয়ে করে সুখে আছে। কথায় আছে , জীবনে সুখ থাকলে তার পাশে দুঃখও থাকবে। তেমনই রুদ্রর জীবনেও হঠাৎ দুঃখ নেমে এল। সে স্কুল থেকে একদিন বাড়ি ফেরার পথে মারাত্মক বাইক দুর্ঘটনায় পড়ে বাঁচল ঠিকই। কিন্তু তার দুটো কিডনিই বিকল হয়ে গেল। খবরের কাগজে একটা খবর বেরল : “প্রফুল্ল চন্দ্র মেমোরিয়াল স্কুলের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইংলিশ টিচার রুদ্র রায়ের বাইক-দুর্ঘটনায় দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। কোন সহৃদয় ব্যক্তি একটি কিডনি দান করলে তাকে এই মুহূর্তে বাঁচান সম্ভব হবে।
বিনিময়ে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে যে কোন আর্থিক মূল্য দিতে প্রস্তুত থাকবে।…”
সব সময় প্রচন্ড কাজের চাপে শোভনার খুব একটা খবরের কাগজ পড়ার সময় হয় না। হঠাৎ সেদিন খবরের কাগজ পড়তে গিয়ে তার ওই খবরটা চোখে আটকে গেল। সমস্ত খবরটা মন দিয়ে পড়ে সে তৎক্ষণাৎ রুদ্র কে একটি কিডনি দানের স্থির সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। বলা বাহুল্য রুদ্রর স্ত্রী , সৌরশ্মি রুদ্রকে তার একটা কিডনি দিতে চেয়েছিল কিন্তু চিকিৎসা বিদ্যা সংক্রান্ত কিছু অসুবিধা থাকায় সেটা নেওয়া যায়নি। শোভনার ক্ষেত্রে সেটা ম্যাচ করে যায়। সৌরশ্মি, রুদ্রর এত কাছের মানুষ হয়েও যেটা পারল না শোভনা দূরে থেকেও সেটা পারল। রুদ্র সুস্থ হয়ে উঠে জানতে পারে যে তার প্রাণদাতা শোভনা। যাকে সে বিয়ের আগের দিন প্রত্যাখ্যান করেছিল। ….
হাসপাতালের পাশের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে সেই মুহূর্তে গান ভেসে আসে “হৃদয় আছে যার সেইতো ভালোবাসে…..”
অনুগল্প- অনন্যমিত্র।বনগ্রাম,উত্তর চব্বিশ পরগনা।পশ্চিম বাংলা।
Leave a Reply